ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ডলারেও পড়বে ঋণের কিস্তির চাপ

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১১:১৬:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ১১৩১ বার পড়া হয়েছে

বিদেশি ঋণ পরিশোধে ক্রমেই চাপ বাড়ছে। গত কয়েক বছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে নেওয়া কঠিন শর্তের ঋণ এ চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। সামনে আরও বাড়বে। কারণ আগামী তিন বছরে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ এখনকার চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। মূলত বিভিন্ন প্রকল্পে চীন ও রাশিয়া থেকে নেওয়া বাণিজ্যিক ঋণ পরিশোধের রেয়াতি সময় (গ্রস পিরিয়ড) দু-তিন বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তখন ঋণের কিস্তি দেওয়া শুরু হবে। নতুন করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধের চাপও যোগ হবে।

এদিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ১১২ কোটি ডলার। এক সঙ্গে এত বেশি ঋণ পরিশোধ এর আগে কখনো শোধ করতে হয়নি বাংলাদেশকে। অর্থবছরের বাকি সময়ে আরও পরিশোধ করতে হবে কমপক্ষে ১৬৬ কোটি ডলার। এতে চলতি অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়াবে অন্তত ২৭৮ কোটি ডলার, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় চাপ। তার চেয়েও বড় চাপ পড়বে ডলারে। কারণ টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। অন্যদিকে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে টাকার মান কমেছে ২৫ শতাংশের বেশি। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ দরের হিসাবে টাকা অবমূল্যায়িত হয়েছে ৩৫ দশমিক ২০ শতাংশ। অন্যদিকে খোলাবাজারে ডলারের দামের হিসাবে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৩৭ শতাংশ। যদিও টাকার মান ধরে রাখতে নানা কৌশল নিয়েছিল সরকার। এর অংশ হিসেবে সদ্যঘোষিত মুদ্রানীতিতেও ভোক্তা ঋণের সুদহার বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকঋণ ও আমানতের সুদহারের ক্যাপ তুলে দেওয়া হয়েছে। ডলার খরচ কমাতে আমদানি
খাত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে ছয় মাস আগে থেকেই।

আগামী (২০২৩-২৪) অর্থবছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে ৩৫০ কোটি ডলার। আর পরের অর্থবছর বেড়ে দাঁড়াবে ৪০২ কোটি ডলারে। ২০২৯-৩০ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধে যাবে ৫১৫ কোটি ডলার। অবশ্য এরপর থেকে ঋণ পরিশোধের চাপ কিছুটা কমে আসবে। অর্থবিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সরকারের ত্রিবার্ষিক বাজেট পরিকল্পনাতেও বিদেশি ঋণ পরিশোধের এমন প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।

গত এক দশকে বাংলাদেশে অনেকগুলো বড় অবকাঠামো হয়েছে। এর মধ্যে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো প্রকল্প রয়েছে। যদিও পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে নিজস্ব অর্থায়নে। বাকিগুলো হয়েছে বিদেশি ঋণে।

নতুন করে ঋণ না নিয়ে শুধু প্রতিশ্রুত ঋণ মিললে আগামী কয়েক বছরে ঋণ পরিশোধে কী পরিমাণ ডলার খরচ হবে, তা তুলে ধরা হয়েছে ইআরডির এক প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে সব মিলিয়ে ২৭৮ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। প্রতিবছরই এরপর সেটা বাড়বে।

ইআরডির তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধে খরচ হয় ১১৭ কোটি ডলার। এর তিন বছর পর ২০২১-২২ অর্থবছরে খরচ হয় ২০১ কোটি ডলার। আর গত অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বার্ষিক ঋণ পরিশোধ ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। ২০২৩-২০২৪ সাালে এটা ৩৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

বিশ‍্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ঋণ পাওয়ার জন্য যেমন সক্ষমতা অর্জন করতে হয়, তেমনি এই ঋণ পরিশোধ করাটাও এক ধরনের চাপ। তবে অর্থনীতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক খাতের সুশাসন যে কোনো দেশের বিদেশি ঋণ পরিশোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

ডলারেও পড়বে ঋণের কিস্তির চাপ

আপডেট সময় ১১:১৬:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

বিদেশি ঋণ পরিশোধে ক্রমেই চাপ বাড়ছে। গত কয়েক বছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে নেওয়া কঠিন শর্তের ঋণ এ চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। সামনে আরও বাড়বে। কারণ আগামী তিন বছরে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ এখনকার চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। মূলত বিভিন্ন প্রকল্পে চীন ও রাশিয়া থেকে নেওয়া বাণিজ্যিক ঋণ পরিশোধের রেয়াতি সময় (গ্রস পিরিয়ড) দু-তিন বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তখন ঋণের কিস্তি দেওয়া শুরু হবে। নতুন করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধের চাপও যোগ হবে।

এদিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ১১২ কোটি ডলার। এক সঙ্গে এত বেশি ঋণ পরিশোধ এর আগে কখনো শোধ করতে হয়নি বাংলাদেশকে। অর্থবছরের বাকি সময়ে আরও পরিশোধ করতে হবে কমপক্ষে ১৬৬ কোটি ডলার। এতে চলতি অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়াবে অন্তত ২৭৮ কোটি ডলার, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় চাপ। তার চেয়েও বড় চাপ পড়বে ডলারে। কারণ টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। অন্যদিকে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে টাকার মান কমেছে ২৫ শতাংশের বেশি। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ দরের হিসাবে টাকা অবমূল্যায়িত হয়েছে ৩৫ দশমিক ২০ শতাংশ। অন্যদিকে খোলাবাজারে ডলারের দামের হিসাবে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৩৭ শতাংশ। যদিও টাকার মান ধরে রাখতে নানা কৌশল নিয়েছিল সরকার। এর অংশ হিসেবে সদ্যঘোষিত মুদ্রানীতিতেও ভোক্তা ঋণের সুদহার বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকঋণ ও আমানতের সুদহারের ক্যাপ তুলে দেওয়া হয়েছে। ডলার খরচ কমাতে আমদানি
খাত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে ছয় মাস আগে থেকেই।

আগামী (২০২৩-২৪) অর্থবছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে ৩৫০ কোটি ডলার। আর পরের অর্থবছর বেড়ে দাঁড়াবে ৪০২ কোটি ডলারে। ২০২৯-৩০ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধে যাবে ৫১৫ কোটি ডলার। অবশ্য এরপর থেকে ঋণ পরিশোধের চাপ কিছুটা কমে আসবে। অর্থবিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সরকারের ত্রিবার্ষিক বাজেট পরিকল্পনাতেও বিদেশি ঋণ পরিশোধের এমন প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।

গত এক দশকে বাংলাদেশে অনেকগুলো বড় অবকাঠামো হয়েছে। এর মধ্যে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো প্রকল্প রয়েছে। যদিও পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে নিজস্ব অর্থায়নে। বাকিগুলো হয়েছে বিদেশি ঋণে।

নতুন করে ঋণ না নিয়ে শুধু প্রতিশ্রুত ঋণ মিললে আগামী কয়েক বছরে ঋণ পরিশোধে কী পরিমাণ ডলার খরচ হবে, তা তুলে ধরা হয়েছে ইআরডির এক প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে সব মিলিয়ে ২৭৮ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। প্রতিবছরই এরপর সেটা বাড়বে।

ইআরডির তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধে খরচ হয় ১১৭ কোটি ডলার। এর তিন বছর পর ২০২১-২২ অর্থবছরে খরচ হয় ২০১ কোটি ডলার। আর গত অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বার্ষিক ঋণ পরিশোধ ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। ২০২৩-২০২৪ সাালে এটা ৩৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

বিশ‍্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ঋণ পাওয়ার জন্য যেমন সক্ষমতা অর্জন করতে হয়, তেমনি এই ঋণ পরিশোধ করাটাও এক ধরনের চাপ। তবে অর্থনীতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক খাতের সুশাসন যে কোনো দেশের বিদেশি ঋণ পরিশোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।